যে কারনে জাদুঘরে রাখা হলো এই কনডম!

নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত রাইকসমিউজিয়ামে সম্প্রতি প্রদর্শিত হচ্ছে একটি অত্যন্ত বিরল ও ব্যতিক্রমধর্মী ১৯ শতকের কনডম, যা শুধুই তার বয়সের জন্য নয়, বরং এর গায়ে খোদাই করা ব্যঙ্গচিত্রের জন্যও ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

রাইকসমিউজিয়ামের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ১৮৩০ সালের এই কনডমটি সম্ভবত ভেড়ার অন্ত্র দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এটি কোনো বিলাসবহুল পতিতালয়ের স্মারক হিসেবে তৈরি হয়েছিল। কনডমটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ সেন্টিমিটার (৭.৯ ইঞ্চি) এবং এটি এখনো নতুন অবস্থায় রয়েছে বলে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।

এই কনডমটির সবচেয়ে আলোচিত দিক হলো, এর গায়ে খোদাই করে আঁকা একটি নগ্ন দৃশ্য। সেখানে দেখা যায়, একজন নান উলঙ্গ অবস্থায় বসে আছেন এবং তাঁর সামনে তিনজন ধর্মযাজক নিজেদের পোশাক খুলে দাঁড়িয়ে আছেন—যাঁদের উত্তেজিত যৌনাঙ্গ দৃশ্যমান। এই চিত্রটির নিচে একটি ফরাসি বাক্য লেখা রয়েছে, যার বাংলা অনুবাদ দাঁড়ায়, “এটাই আমার পছন্দ।”

জাদুঘর কর্তৃপক্ষের মতে, এই চিত্র ও লেখা মূলত সন্ন্যাস জীবনের সংযমের ব্যঙ্গচিত্র এবং গ্রিক পুরাণে উল্লেখিত ‘প্যারিসের বিচার’-এর একটি বিদ্রুপাত্মক উপস্থাপনা।

রাইকসমিউজিয়ামের ছাপচিত্র বিভাগের কিউরেটর জয়েস জেলেন জানিয়েছেন, ১৯ শতকে কনডম মূলত গোপনে বিক্রি হতো এবং এটি ব্যবহারের বিষয়টিও ছিল সমাজে গোপনীয়। এই কনডমটি অতিবেগুনি আলোতে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এটি কখনো ব্যবহার করা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, “এই কনডমটির গায়ে যেভাবে খোদাই করে চিত্র আঁকা হয়েছে, তা বোঝায় যে এটি শুধুই ব্যবহারিক নয় বরং শৈল্পিক এবং ঐতিহাসিক মূল্যও বহন করে।”

জেলেন ব্যাখ্যা করেন, ছাপচিত্রকার প্রথমে ভেড়া বা ছাগলের অন্ত্র সমানভাবে ছড়িয়ে তাতে কপারে খোদাই করা ছাঁচের মাধ্যমে কালি ব্যবহার করে এই ব্যঙ্গচিত্রটি মুদ্রণ করেছিলেন। এই প্রক্রিয়া সেই সময়ের জন্য অত্যন্ত উন্নত ও ব্যতিক্রমধর্মী ছিল।

যদিও এই নির্দিষ্ট কনডমটি বাস্তবে ব্যবহার হয়নি, তবে সে সময়ের কনডমগুলো যৌন রোগ যেমন সিফিলিস ও অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ থেকে সুরক্ষা দিতে সহায়তা করত। ১৯ শতকের ইউরোপে যৌন রোগ ছিল একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা, এবং এ ধরনের কনডম সে সময়ে তুলনামূলকভাবে সচেতন ব্যক্তিদের মধ্যে ব্যবহৃত হতো।

প্রায় ছয় মাস আগে রাইকসমিউজিয়াম একটি নিলাম থেকে কনডমটি সংগ্রহ করে। এখন এটি ‘১৯ শতকের যৌনতা ও পতিতাবৃত্তি’ বিষয়ক একটি বিশেষ প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে ছাপচিত্র গ্যালারিতে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। প্রদর্শনীটি চলবে চলতি বছরের নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত।

সম্প্রতি রাইকসমিউজিয়াম আরও আলোচনায় উঠে এসেছে বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী জোহানেস ভারমিয়ারের বৃহত্তম চিত্র প্রদর্শনী আয়োজন এবং শ্রীলঙ্কায় ঔপনিবেশিক যুগে চুরি যাওয়া শিল্প বস্তু ফিরিয়ে দেওয়ার মতো সাংস্কৃতিক উদ্যোগের কারণে।

তথ্যসূত্র: আজকের পত্রিকা

Leave a Reply