টিউলিপ সিদ্দিকের ১৩ বছরের আয়কর নথি জব্দ করলো দুদক

যুক্তরাজ্যের এমপি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আয়কর সংক্রান্ত তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ১৩ বছরের আয়কর নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে তদন্তের স্বার্থে।

দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “অনুসন্ধান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কমিশন যে কারও আয়কর নথি সংগ্রহ ও যাচাই করার অধিকার রাখে।” তিনি আরও জানান, কমিশনের একটি তদন্ত সংশ্লিষ্ট মামলার আওতায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি ঢাকার অভিজাত গুলশান এলাকায় একটি সরকারি প্লট অবৈধভাবে হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়ায় ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে তিনি একটি ফ্ল্যাট গ্রহণ করেন।

দুদক এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৫ এপ্রিল একটি মামলা দায়ের করে। কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই ঘটনার পেছনে ঘুষ লেনদেনের স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে।

অভিযোগ প্রকাশের সময় টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার অর্থনীতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তবে মামলার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরপরই তিনি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভার পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তার এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

অভিযোগের বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এটি একটি ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা। তাদের দাবি, “এই অভিযোগের কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। টিউলিপ সিদ্দিক কখনও বাংলাদেশে কোনো বেআইনি সম্পদ অর্জন করেননি। বরং রাজনৈতিকভাবে হয়রানির উদ্দেশ্যেই এসব করা হচ্ছে।”

টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির একজন সংসদ সদস্য। তিনি লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে নির্বাচিত। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার একমাত্র কন্যা। তার রাজনৈতিক অবস্থান ও পারিবারিক পরিচয়ের কারণে বিষয়টি আরও বেশি আলোচিত হয়ে উঠেছে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, আয়কর নথিপত্র যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যদিও এখন পর্যন্ত টিউলিপ সিদ্দিককে সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়নি। তবে তদন্তের অগ্রগতি অনুযায়ী ভবিষ্যতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য—দুই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে একজন প্রভাবশালী ব্রিটিশ এমপির বিরুদ্ধে বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগ এবং তদন্ত অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এই বিষয়ে নানা মত ও বিশ্লেষণ উঠে এসেছে।

টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং দুদকের অনুসন্ধান প্রক্রিয়া একটি সংবেদনশীল ও বহুমাত্রিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি কেবল একজন রাজনীতিবিদের নয়, বরং দুই দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে। এখন দেখার বিষয়, তদন্ত শেষে এই ইস্যু কোন দিকে গড়ায়।

তথ্যসূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ

Leave a Reply